ভলিউম স্প্রেড এনালাইসিস (পর্ব-৩) : মৌলিক
বিষয়াবলীঃ
===============================
( লেখক কর্তৃক স্বত্ব সংরক্ষিত)
কিভাবে বুঝবো একটা মার্কেট
স্ট্রং না উইক?
--------------------------------------
শেয়ার মার্কেটে প্রতিদিন শুরু থেকে শেষ
পর্যন্ত আমরা অনেক বাই
বা সেল অর্ডার দেখি।
কখনো দেখা যায়, কোন একটি শেয়ার দীর্ঘদিন ধরে
একটা ন্যারো রেঞ্জে ট্রেড
হচ্ছে হঠাৎ দেখা গেলো
অনেক বড় ভলিউমে ট্রেড
হচ্ছে এবং দাম অনেক
বেড়ে গেছে। মাঝে মধ্যে
এ ধরনের শেয়ারের দাম
আগের দিনের চেয়ে একটা
বড় গ্যাপ দিয়ে শুরু
হয় অথবা দিনের শুরুতে
আগের দিনের ক্লোজের কাছাকাছি
শুরু হয়ে সারাদিন ধরে
বাড়তে থাকে এবং দিনশেষে
আপার সার্কিট স্পর্শ করে, আবার
দেখা যায় দিনের শুরুতে
আপার সার্কিটের কাছাকাছি থেকে ট্রেড শুরু
হয়ে দিনের শেষে লোয়ার
সার্কিটে ট্রেড হয়। কেন
এমন হয়?
আমরা জানি, শেয়ারবাজারে অনেক
ধরণের বিনিয়োগকারী আছেন, বড় বিনিয়োগকারী
বা গ্যাম্বলাররা তাদের বেশি ক্ষমতার
( মূলধন) কারণে বাজারকে প্রভাবিত
করতে পারেন। তাদের একাউন্টে
অনেক বড় ভলিউমের শেয়ার
থাকে। যদি না থাকে
তবে তারা বর্তমান প্রাইস
থেকে উপরে আরেকটি প্রাইস
লেভেল সেট করেন যাতে
তারা বেশীরভাগ শেয়ার কিনতে পারেন।
বাজার যখন উঠতে থাকে
তখন দেখা গেলো দিনের
শুরুতেই আপনার আগের কেনা
কোন শেয়ারের দাম হঠাৎ ১০%
বেড়ে গেলো। আপনি ১০%
লাভ পেয়ে খুশি হয়ে
বিক্রি করে দিলেন। পরের
২ দিনে দেখা গেলো
এর দাম আরো বাড়ছে,
তখন শুধুই আফসোস। বুল
মার্কেটে আপনার শেয়ারের ভালো
দাম পাওয়ার কারণ কি?
এর কারণ কি এটা
যে বড় বিনিয়োগকারী বা
গ্যাম্বলার আপনাকে পছন্দ করে,
তাই তারা তাদের লাভের
কিছু অংশ আপনার জন্য
ছেড়ে দিয়েছে? আসল কারণ হল
বড় বিনিয়োগকারীদের বুলিশ মুভে লাভ
বের করার জন্য বেশি
পরিমাণ শেয়ার হাতে নেই,
তাই তারা বেশি পরিমাণ
শেয়ার কেনার জন্য আরেকটা
প্রাইস লেভেল সেট করেছেন।
এভাবে হঠাৎ দাম বাড়িয়ে
দেওয়া কে আমরা বলি
মার্ক আপ ( Mark UP)। অন্যদিকে
হঠাৎ দাম কমিয়ে ফেলাকে
আমরা বলি মার্ক ডাউন
(Mark Down)।
মাঝে মধ্যে দিনের শুরুতেই
কোন শেয়ারের দাম আপার সার্কিট
স্পর্শ করে ফেলে। এই
গ্যাপটা তৈরী করা হয়
খুব দ্রুত যাতে এটার
একটা Emotional Effect তৈরী হয়। এটা
করা হয় সাধারণতঃ একটা
দুর্বল মার্কেটে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার
কিনে নেওয়ার জন্য। যারা
শর্ট টাইমে বিনিয়োগ করেন
তারা লাভ হবার কারণে
দ্রুত সেল করে দেন,
প্যানিক ট্রেডার রা ফাঁদে পা
দেয় এবং তাদের শেয়ার
সেল করে দেয়। কিন্তু
এরপর দেখা যায় ঐ
শেয়ারের দাম বাড়তে থাকে।
সাধারণতঃ বুল মুভে এ
ধরণের গ্যাপ তৈরী করা
হয়, যখন চারিদিকে শুধুই
ভালো খবর, দাম বাড়ার
নতুন নতুন রেকর্ড হচ্ছে,
আর সবাই ছুটছেন ঐ
শেয়ার ধরার জন্য। এখন
আমাদের বুঝতে হবে কোন
গ্যাপ টা তৈরী করা
হয়েছে দাম বাড়ানোর জন্য
বা নতুন প্রাইস লেভেল
সেট করার জন্য আর
কোন গ্যাপটা তৈরী করা হয়েছে
প্রফেশনাল ট্রেডারদের শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের
গছিয়ে দেওয়ার জন্য। আসুন
ব্যাপারটা ভালো করে বুঝার
চেষ্টা করি।
কোন শেয়ারের দাম বাড়ার জন্যও
যথেষ্ঠ পরিমাণ শেয়ার প্রফেশনাল
ট্রেডারদের বুকে থাকা প্রয়োজন।
এজন্য পেছনে ফিরে তাকাতে
হবে। যদি দেখা যায়
এর আগে অনেকদিন মার্কেট
সাইডওয়ে মুভ করেছে এবং
ভালো পরিমাণ শেয়ার ট্রেড
হয়েছে তাহলে বুঝতে হবে
প্রফেশনাল ট্রেডারদের হাতে বেশ ভালো
পরিমাণ শেয়ার আছে। এখন
গ্যাপ দিয়ে দাম বাড়ানোর
অর্থ হল প্রফেশনাল ট্রেডাররা
তাদের শেয়ার বিক্রি করার
জন্য মার্ক আপ করছে।
আগে কিছুদিন সাইডওয়ে মুভ করার পর
যদি বড় ভলিউমের সাথে
দামের বড় গ্যাপ দেখা
যায় তাহলে বুঝতে হবে
ঐ শেয়ারের দাম বাড়বে ।
অন্যদিকে দামের গ্যাপ আছে
কিন্তু ভলিউম সাপোর্ট না
থাকলে বুঝতে হবে এটা
False Move. যদি কোন ডাউন ওয়ার্ড
ট্রেডিং চ্যানেলে বড় ভলিউমের সাথে
গ্যাপ দিয়ে শেয়ারের দাম
বাড়ে তবে সেটাকে আমরা
ট্র্যাপ গ্যাপ বলতে পারি।
বাজার বুলিশ মুভে যাচ্ছে
কিন্তু এর আগে সাইডওয়ে
মুভমেন্ট না থাকলে বুঝতে
হবে প্রফেশনাল ট্রেডারদের হাতে খুব বেশি
শেয়ার নেই। সেক্ষেত্রে তারা
শেয়ার কালেকশনের জন্য আপার সার্কিটের
কাছাকাছি একটা প্রাইস লিমিট
সেট করবে এবং বেশি
পরিমাণ শেয়ার কিনে নিতে
চাইবে, এক্ষেত্রে দামের স্প্রেড খুব
ছোট হবে এবং দামে
একটা বড় গ্যাপ থাকবে।
যেমন আগের দিনের ক্লোজ
প্রাইস ৫০ টাকা হলে
তারা দিনের শুরুতেই ৫৫
টাকার কাছাকাছি প্রাইস সেট করবে
এবং যত শেয়ার আসবে
সবগুলোই কিনে নেবে।
চার্টে দেখুন, বামদিকে একটা
ন্যারো সাইডওয়ে মুভমেন্ট থাকার পরে গ্যাপ
দিয়ে বেশি ভলিউমে ট্রেড
হয়েছে। এই আপ যে
প্রফেশনাল ট্রেডারদের কাছে থাকা শেয়ার
বিক্রি করার জন্য তা
পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। কারণ
এর আগে বাজার বেশ
কিছুদিন সাইডওয়ে মুভ করেছে এবং
প্রফেশনাল ট্রেডাররা শেয়ার কেনার জন্য
যথেষ্ঠ সময় পেয়েছে। বড়
ভলিউমে ট্রেড প্রাইস স্প্রেডকে
সাপোর্ট করছে। এটাকে অনেকে
বুলিশ ব্রেক আউট ও
(Bullish Breakout) বলে থাকেন। এ ধরণের
চার্ট প্যাটার্ণ দেখলে আপনি বাই
এর সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। ডানদিকে
আরেকটি বড় গ্যাপে শেয়ারের
দাম বেড়েছে, কিন্তু ভলিউম খুব
বেশি বাড়েনি, অর্থাৎ প্রফেশনাল ট্রেডারদের
এই শেয়ারের প্রতি এই দামে
কেনার আগ্রহ নেই। আবার
বাজার ডাউনওয়ার্ড ট্রেডিং চ্যানেল এ আছে , কাজেই
এই মুভ আসল নয়।
সারাংশঃ কোন শেয়ারের বুলিশ
ব্রেক আউট হলে অর্থাৎ
বড় ভলিউমের সাথে দামের স্প্রেড
বেশি হলে দেখতে হবে
এর আগে ঐ শেয়ারের
কোন সাইডওয়ে মুভমেন্ট আছে কিনা? যদি
থাকে তবে এই ব্রেক
আউট আসল। বড় ভলিউমের
সাথে বুলিশ ব্রেক আউট
হলে কিন্তু এর আগে
সাইডওয়ে মুভমেন্ট না থাকলে বুঝতে
হবে প্রফেশনাল ট্রেডাররা শেয়ার কেনার জন্য
নতুন প্রাইস লেভেল সেট
করতে যাচ্ছে, এর পর কিছুদিন
বাজার সাইডওয়ে মুভ করতে থাকবে
, সাইডওয়ে মুভমেন্টের পরে বুলিশ ব্রেক
আউট হলে তা আসল
হবে।
(চলবে............)
পরবর্তী পর্ব (পর্ব-৪)- বাই ও সেল কিভাবে সনাক্ত করবো।
Writer : Taj U Ahmed