Jan 21, 2011

Collected : Netting Tips

কার্যকরী নেটিং কৌশল

দৈনিক ট্রেডিং এ নেটিং এর মাধ্যমে আপনি আপনার পোর্টফোলিও সমুহের মূল্য বাজার মূল্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ন রাখার সাথে সাথে লাভ নিশ্চিত করতে পারেন , ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারেন। উঠতি বাজারে ( বুল মার্কেট) নেটিং না করেও আপনি মুনাফা পেতে পারেন কিন্তু পড়তি বাজারে (বিয়ার মার্কেট) যখন শেয়ারের মূল্য ক্রমাগত পড়তে থাকে তখন এ ব্যবস্থা কার্যকরী হতে পারে।

নেটিং কি?
নেটিং হল আপনার পোর্টফোলিও সমূহের আর্থিক সমন্বয় ব্যবস্থা। অর্থাৎ একটি শেয়ার বিক্রয় করে একই দিনে ঐ একই শেয়ার বা অন্য কোন শেয়ার ক্রয় করতে পারেন। এর আগে "এ" বা "বি" ক্যাটাগরীর শেয়ার বিক্রয় করে একই দিনে "জেড" ক্যাটাগরীর শেয়ার কিনতে পারতেন না কিংবা ঐ একই শেয়ার পুনরায় একই দিনে কিনতে পারতেন না। সকল শেয়ারের উপর নেটিং এর নীতিমালা শিথিল করায় এখন আপনি যে কোন শেয়ার বিক্রি করে একই দিনে ঐ একই শেয়ার বা অন্য কোন শেয়ার কিনতে পারেন। শেয়ার কেনাবেচার এই পদ্ধতিকেই নেটিং বলে।

নেটিং কেন করবেন?
পড়তি বাজারে শেয়ারের দাম প্রতিনিয়ত নামতে থাকে। আপনি যদি আপনার শেয়ারের দাম সমন্বয় না করেন তাহলে আপনার পুঞ্জিভূত ক্ষতির পরিমান দিন দিন বাড়তে থাকবে। ধরুন, আপনি ১ মাস আগে আফতাব অটোমোবাইলের ১ লট(৫০টি) শেয়ার কিনেছেন ৫০০ টাকা হিসেবে, আপনার ক্রয়মূল্য ২৫০০০ টাকা এবং কমিশন ১২৫ টাকা , মোট ক্রয়মুল্য ২৫১২৫ টাকা। একমাসে উক্ত শেয়ারের দাম পড়তে পড়তে বর্তমানে শেষ বাজার মূল্য ৩৭৫ টাকায় দাঁড়াল। এ মুহুর্তে উক্ত শেয়ার বিক্রি করে আপনি পাবেন [(৩৭৫*৫০)-(৩৭৫*৫০) এর ০.৫০%] অর্থাৎ ১৮৮৪৩.৫০ টাকা, অর্থাৎ আপনার ক্ষতির পরিমান দাঁড়াল (২৫১২৫-১৮৮৪৩.৫০) অর্থাৎ ৬২৮১.৫০ টাকা, শতকরা হিসেবে ২৫%। পড়তি বাজারে শেয়ারের দাম যে হারে পড়ে সে হারে উঠে না। আপনাকে আপনার কেনা দাম ফিরে পেতে হয়ত ৩ মাস বা তারো বেশি সময় লাগতে পারে। আপনি হয়ত বছরে ১০০% লাভ হিসেব করে ১০০০ টাকায় উক্ত শেয়ার বিক্রিকরতে চান। পড়তি বাজারে আপনার উক্ত দাম উঠতে ১ বছর বা তারো বেশি সময় লাগতে পারে। এ দীর্ঘ সময় আপনার উক্ত শেয়ারগুলো পাষাণস্তুপের মত আপনার কাছে জমা হয়ে থাকবে। আপনার বিনিয়োগ আটকে থাকল, অপর দিকে কোন লাভজনক শেয়ারে বিনিয়োগের সুযোগ আপনার হাতছাড়া হয়ে গেল। তাই আপনার বিনিয়োগকৃত টাকার সবসময় তারল্য বজায় রাখতে নেটিং অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে।

কোন ধরনের শেয়ারে নেটিং করবেন?
আপনি যে কোন শেয়ারে নেটিং করতে পারেন। তবে আপনার কেনা যে সকল শেয়ারে ক্ষতির পরিমান দিন দিন বাড়ছে, আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার জন্য সে সকল শেয়ারে নেটিং করতে পারেন। আপনি দৈনিক শেয়ার ক্রয় বিক্রয় করে লাভবান হতে চাইলেও নেটিং করতে পারেন। আমি কয়েকটি শেয়ারের নাম দিচ্ছি যেগুলোতে নেটিং করে চলতি মাসে আপনি কিছু লাভ পেতে পারেন। মনে রাখবেন, এখন যেই শেয়ার নেটিং উপযোগী তা ১৫ দিন বা এক মাস পরে নেটিং উপযোগী নাও থাকতে পারে। নেটিং সব সময় কাঙ্ক্ষিত ফল নাও দিতে পারে ( এ সম্পর্কে পৃথক অনুচ্ছেদে পরে বর্ননা করা হয়েছে)।

ব্যাংক --->> প্রাইম
বিনিয়োগ ---> এআইবিএল ১ম মিউচ্যুয়াল ফান্ড
প্রকৌশল ---> আফতাব অটো
টেক্সটাইল ---> বেক্সিমকো সিনথেটিক
চামড়া ---> বাটা সু
ইন্স্যুরেন্স --> এশিয়া ইন্সুরেন্স, এশিয়া প্যাসিফিক ইন্সুরেন্স, কন্টিনেন্টাল ইন্সুরেন্স, ইস্টল্যান্ড ইন্সুরেন্স
লাইফ ইন্সুরেন্স ---> মেঘনা লাইফ

নির্বাচনের ভিত্তিঃ
১। মৌল ভিত্তির শেয়ার
২। দৈনিক ট্রেড ভলিউম সন্তোষজনক(প্রতি মিনিটে গড়ে কমপক্ষে ১ টি ট্রেড)
৩। প্রাইস স্প্রেড সন্তোষজনক (কমপক্ষে ৬%)

সতর্কতাঃ বিনিয়োগ, প্রকৌশল ও টেক্সটাইল খাতের শেয়ারগুলোর দাম পড়তির দিকে। নতুন বিনিয়োগে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।

নেটিং বনাম এভারেজঃ
অনেকে বলে থাকেন, দাম পড়লে আরো শেয়ার কিনে এভারেজ করতে। এভারেজ আপনি করতে পারেন, তবে সেক্ষেত্রে আপনার পূঁজির পরিমান তুলনামূলক বেশী থাকা বাঞ্ছনীয়। এভারেজ ব্যবস্থা সবসময় কার্যকর নাও হতে পারে। বিশেষ করে, কোন কোম্পানী যদি কাঙ্ক্ষিত মুনাফা না দেয় বা দেউলিয়া হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে আপনার ঝুঁকির মাত্রা অনেক বেড়ে যায়। উদাহরন স্বরূপ, পদ্মা অয়েলের কথাই ধরুন। এই কোম্পানীটি প্রতি বছর ভালো লভ্যাংশ দিয়ে থাকে, গত বছর ১০০% নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। বিনিয়োগকারীগন আশা করেছিল কোম্পানীটি অন্ততঃ ৫০% শেয়ার লভ্যাংশ দেবে। কিন্তু তা না হওয়ায় শেয়ারের দাম ১৪০০ টাকা থেকে প্রায় ৭০০ টাকায় নেমে আসে। ধরুন আপনি ১৪০০ টাকায়ই উক্ত শেয়ার কিনেছেন, মাত্র কয়েকদিনে আপনার শেয়ারের দাম ৫০% কমে গেল। এই শেয়ার থেকে আপনার কেনা দাম ফিরে পেতে আপনাকে অন্তত ১০ মাস অপেক্ষা করতে হবে। আপনি যদি ১লট শেয়ার কিনে এভারেজ করেন তাহলে আপনার গড় দাম হবে ১০৫০ টাকা, ২ লট কিনলে গড় হবে ৯৩৩ টকা। ৩ লট কিনলে গড় হবে ৮৭৫ টাকা, ৪ লট কিনলে হবে ৮৪০ টাকা, ৫ লট কিনলে গড় ৮১৬ টাকা যা বাজার মূল্যের যথাক্রমে ৫০%, ৩৩%, ২৫%, ২০% ও ১৫%। এক্ষেত্রে আপনার কেনা দাম ফিরে পেতে সময় লাগবে যথাক্রমে ৮, ৬, ৪, ৩ ও ২ মাস(আনুমানিক)। আরেকটি বিবেচ্য বিষয় হল আপনার বিনিয়োগ ক্রমাগত পুঞ্জিভূত হয়ে থমকে(stagnant) থাকবে। আপনি সম পরিমান পূঁজি দিয়েই নেটিং এর মাধ্যমে আপনার ক্ষতি পুষিয়ে কিছুটা লাভের মুখ দেখতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনার আনুমানিক সময় লাগতে পারে ১৫ দিন।

কখন নেটিং কাঙ্ক্ষিত ফল দেবে নাঃ
কোন শেয়ারের দাম তার সর্বনিম্ন বা সর্বোচ্চ দামের কাছাকাছি চলে গেলে নেটিং ব্যবস্থা কার্যকরী ফল দিতে পারবেনা। বিষয়টি আপনি কিভাবে বুঝবেন? যদি দেখেন পর পর অন্তত ৩ দিন শেয়ারটির দাম ২% এর কম বাড়ছে বা কমছে তাহলে বুঝা যাবে শেয়ারটি তার সর্বনিম্ন বা সর্বোচ্চ দামের কাছাকাছি চলে গেছে। বেক্সিমকো লিমিটেড এর কথাই ধরুন, এই শেয়ারটির দাম বর্তমানে স্থিতিশীল আছে, খুব বেশি বাড়ছে না আবার কমছেও না। কোম্পানীটি সাধারনতঃ মার্চ মাসে লভ্যাংশ ঘোষনা করে থাকে। অর্থাৎ জানুয়ারী বা ফেব্রুয়ারী মাসে এর দাম পড়ার কোন সম্ভাবনা নেই, বরং দিন দিন অল্প অল্প করে বাড়তে থাকবে, বেক্সিমকোতে বিনিয়োগের এখন উপযুক্ত সময় হতে পারে। এ সময় এ শেয়ারের দামের পার্থক্য (price spread) খুব বেশি থাকবে না। কাজেই এখানে নেটিং করা অর্থহীন।

কিছু গুরুত্বপূর্ন টিপসঃ
১। কোন শেয়ারের দাম কমতে থাকলেই নেটিং করে ক্ষতি পুষিয়ে নেবেন।
২। কোন শেয়ারের দৈনিক সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন মূল্যের পার্থক্য ৬% এর কম হলে সেখানে নেটিং না করাই ভালো।
৩। কোন শেয়ারের দাম পড়ে যাওয়ার পর সেখান থেকে দ্রুত উঠতে থাকলে অর্থাৎ কোন দিন ঐ শেয়ারের মূল্য ৫% এর বেশি বৃদ্ধি পেলে নেটিং বন্ধ করুন।
৪। নেটিং এর সাথে ব্রোকারেজ কমিশন ও জড়িত।প্রতি ক্রয় বিক্রয়ে ১% কমিশন দিতে হয়। তাই উঠতি শেয়ারে নেটিং করলে আপনার লাভ ব্রোকারের কাছে চলে যাবে।
৫। জাঙ্ক শেয়ার ( দুর্বল মৌল ভিত্তির) এবং গ্যাম্বলিং শেয়ারে প্রাইস স্প্রেড বেশি হয়ে থাকে। আমি অবশ্যই আপনাকে এসব শেয়ারে বিনিয়োগ করতে বলব না। তবে কোন কারনে আপনি যদি এ ধরনের শেয়ারে ঢুকে পড়েন তাহলে নেটিং এর মাধ্যমে আপনি অল্প সময়ে বের হতে পারেন এবং কিছু লাভও বের করতে পারেন।

কিভাবে করবেনঃ
আমাদেরকে যেহেতু শেয়ার কেনার দিন হতে পরবর্তী তৃতীয় দিনে বিক্রি করতে হয় তাই নেটিং এর জন্য আপনাকে তিনটি পৃথক দিনে কমপক্ষে ৩ লট শেয়ার কিনতে হবে। আপনি ঐ শেয়ারের পূর্ববর্তী অন্তত ২০ দিনের প্রাইস স্প্রেড অর্থাৎ সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন দামের পার্থক্য লক্ষ্য করুন। উক্ত দামের গড় বের করে নিন।ধরুন যদি পার্থক্য ৬% হয় তাহলে আপনার শেয়ার বিক্রিযোগ্য হবার দিন পূর্ববর্তী দিনের শেষ দামের উপর ৩%(পার্থক্যের অর্ধেক) যোগ করে বিক্রয় আদেশ দিন, আপনার শেয়ার বিক্রি হোক বা না হোক পূর্ববর্তী দিনের শেষ দাম হতে ৩% (পার্থক্যের অর্ধেক) বাদ দিয়ে ক্রয় আদেশ দিন। আপনি সব সময় এভাবে কিনতে পারবেন এমন কোন কথা নেই। আবার কোন ব্রোকার হাউজ আপনাকে একই দিনে একই শেয়ার ক্রয় বিক্রয় করতে নাও দিতে পারে। এজন্য কমপক্ষে ২ টি শেয়ার নির্বাচন করুন যাতে একটি বিক্রি করে অন্যটি কিনতে পারেন।

ক্রয় বা বিক্রয়ের অর্ডার কখন দেবেনঃ
বিক্রয়ের অর্ডার ট্রেড শুরু হবার প্রথম ১৫ মিনিটের মধ্যে। আর ক্রয়ের জন্য বাকি যে কোন সময়। এক্ষেত্রে ক্রয়ের জন্য আপনি পর্যাপ্ত সময় পাবেন। ঝোপ বুঝে কোপ দিন।

সতর্কীকরনঃ এই আর্টিকেল এর শেয়ার ক্রয় বিক্রয় সংক্রান্ত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। এ লেখটি কেবলমাত্র সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ধারনা অর্জনের জন্য প্রকাশ করা হল। এটি বিনিয়োগের মাধ্যমে লাভের গ্যারান্টি প্রদান করে না। এর আলোকে কেউ বিনিয়োগ করে ক্ষতিগ্রস্ত হলে লেখক এর দায় বহন করবেন না।