স্টপ লস
=====
গাড়ি চলে
না, চলে
না , চলেনা
রে, গাড়ি
চলে না.........।
চড়িয়া মানব
গাড়ি, যাইতেছিলাম
বন্ধুর বাড়ি...............।
সিডি প্লেয়ারে
গান চলছে।
আমি এক
বন্ধুর সাথে
যাচ্ছিলাম রাঙ্গামাটি। ৯০ মডেলের একটা
করোলা গাড়ি।
বন্ধুর ড্রাইভিং
এর হাত
ভালো। গান
শুনতে শুনতে
যাচ্ছি। রাঙ্গামাটিতে
একটু অবকাশ
যাপন। বেতবুনিয়া
ভূ-উপগ্রহ
কেন্দ্র থেকে
খাড়া রাস্তা
শুরু হল,
কিছু আপওয়ার্ড
স্লোপ, আবার
কিছু ডাউনওয়ার্ড
স্লোপ, মাঝেমধ্যে
কিছুটা সমতল
রাস্তা। ভালোই
চলছিল। হঠাৎ
একটা খাড়া
রাস্তা উঠতে
গিয়ে গাড়ির
স্টার্ট বন্ধ
হয়ে গেল।
গাড়ি পিছনের
দিকে নামতে
শুরু করলো।
বন্ধুটি তাড়াতাড়ি
হ্যান্ডব্রেক টেনে গাড়ি থামালো। তখনো
গান চলছে
" কখন গাড়ি ব্রেক ফেল করে
ঘটায় কোন
দুর্ঘটনা.................." । জিজ্ঞেস
করলামঃ কি
হইছে? সে
বললোঃ কার্বুরেটরে
ঠিকমত তেল
যাচ্ছে না।
আশেপাশে কোন
গ্যারেজও নেই।
গাড়ির সামনের
ডালা খুলে
কি কি
যেন চেক
করলো, এর
পর আবার
যাত্রা শুরু
করলাম। পরের
খাড়া রাস্তা
টা আরো
বেশি খাড়া
এবং বেশ
দীর্ঘ। আস্তে
আস্তে যাচ্ছি।
খাড়া রাস্তার
প্রায় চুড়ার
কাছাকাছি গিয়ে
আবারো একই
অবস্থা। এবার
হ্যান্ডব্রেক টানতে টানতে গাড়ি বেশ
খানিকটা নিচের
দিকে নেমে
গেলো। মনে
মনে বেশ
ভয় পেলাম।
বন্ধুটি বললোঃ
কি রে,
ভয় লাগছে
নাকি? আমি
বললামঃ আরে
কিসের ভয়?
মুখেই বলছি
কিসের ভয়,
কপালে বিন্দু
বিন্দু ঘাম
জমেছে। বন্ধুটি
বললোঃ ভয়
পাইস না।
ম্যায় হুঁ
না।আমি মৃদু
হাসলাম। যাহোক
গল্প আর
বাড়াচ্ছি না।
কলির সন্ধ্যা
নামে বাংলায়
একটা বাগধারা
আছে যার
মানে হল
কষ্টের শুরু।
সেদিনের সেই
সন্ধ্যা আমার
জীবনের স্মরণীয়
সন্ধ্যা বৈকি!!!
এবার এই
গল্পের উপর
কিছু ক্যুইজঃ
১। হ্যান্ডব্রেক
টেনে গাড়ি
না থামালে
কি হত?
২। দ্বিতীয়
আপওয়ার্ড স্লোপে
উঠার সময়
হ্যান্ডব্রেক টানতে টানতে আগের চেয়ে
বেশি পেছনে
চলে গেল
কেন?
৩। বন্ধুর
"ম্যায় হুঁ না" অভয়বাণী কি
আমার ভয়
দূর করতে
পেরেছিলো?
৪। লং
ড্রাইভে যাওয়ার
আগে গাড়ি
কি চেক
করে নেওয়া
দরকার ছিলো?
৫। বন্ধুটি
যদি আনাড়ী
ড্রাইভার হত
তাহলে কি
হতে পারতো?
এই ক্যুইজগুলোর
মধ্যে ঝুঁকি
ব্যবস্থাপনার কিছু বিষয় লুকিয়ে আছে।
লক্ষ্য করুন,
ঝুঁকি মোকাবেলার
জন্য বন্ধুটি
হ্যান্ডব্রেক ব্যবহার করেছে। এটা ব্যবহার
না করলে
হয় আরো
পেছনে যেতে
হত কিংবা
গাড়ি খাদে
পড়ে দুর্ঘটনা
ঘটতে পারতো।
এই গল্পের
ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার
সাথে শেয়ার
ব্যবসার ঝুঁকি
ব্যবস্থাপনার কিছুটা মিল আছে। গাড়ি
আরো নিচের
দিকে যাওয়া
রোধ করতে
বা দুর্ঘটনা
এড়াতে যেমন
হ্যান্ডব্রেক টানা হয়েছিল, তেমনি শেয়ারব্যবসার
ঝুঁকি মোকাবেলার
জন্য বা
শেয়ারের দাম
আরো কমে
যাবার আগেই
তাকে রক্ষা
করার একটা
কৌশল আমরা
প্রয়োগ করি,
এই কৌশলকে
গল্পের ভাষায়
আমরা বলতে
পারি Pull Handbreak কৌশল.।
শেয়ারবাজারে এই কৌশলকে আমরা বলি
"স্টপ লস"।
স্টপলস এর কৌশল কতটা জরুরী
তা বুঝার
জন্য আমরা
সাপ্রতিক সময়ের
শেয়ারের উঠানামা
কে বিবেচনা
করবো। গত
২৫ শে
মে থেকে
২৫ শে
জুলাই, ২০১১
পর্যন্ত আমরা
একটা উঠতি
বাজার যেমন
পেয়েছিলাম তেমনি ২৬ শে জুলাই
থেকে ২২
সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ক্রমাগত পড়তি বাজার
পেয়েছি। এখন
দেখুন এই
স্টপ লস
কৌশল যারা
প্রয়োগ করেছে
এবং যারা
প্রয়োগ করেনি
তাদের তুলনামূলক
লাভ বা
ক্ষতির একটা
হিসাব করি।
ধরে নিচ্ছি,
গত২৬/০৭/২০১১ তারিখে
আপনি কাশেম
ড্রাইসেল এর
শেয়ার কিনেছেন
১০০ টাকায়,
পরেরদিন ১০৩
টাকা পর্যন্ত
দাম উঠলো,
তার পরদিন
ও ১০৩
টাকায় ক্লোজ
হল। ম্যাচিউর
ডে তে
ওপেন হল
১০৩ টাকায়,
১০৪ টাকা
পর্যন্ত উঠে
আবার ৯৭
টাকা পর্যন্ত
নামলো এবং
৯৮ টাকায়
ক্লোজ হল।
ম্যাচিউর ডে
তে দাম
বেশি না
উঠায় আপনি
কোন সিদ্ধান্ত
নেননি, কিন্তু
দিনশেষে ৯৮
টাকায় ক্লোজ
হওয়ায় আপনার
২% লস
হল। পরের
দিন ১০০
টাকায় ওপেন
হল, ৯৬
টাকা পর্যন্ত
নেমে ৯৬.৪ টাকায়
ক্লোজ হল।
এই দামে
বিক্রি করলে
আপনার ৪%
লস হয়,
পরের দিন
৯৬ টাকায়
ওপেন হয়ে
দাম ক্রমাগত
কমতে থাকল।
৯৫ টাকায়
বিক্রি করে
আপনি ৫%
লস নিলেন।
আর যদি
বিক্রি না
করতেন তাহলে
পরবর্তী দেড়
মাসে আপনার
লস হত
২০%।
৯৫ টাকায়
বিক্রি করে
আপনি ৫%
লোকসান নিলেও
আপনার বাকি
মুলধন সুরক্ষিত
থাকলো। এই
শেয়ারটির দাম
যখন সর্বনিম্ন
৮০ টাকায়
আসলো তখন
আপনার পারচেজ
পাওয়ার বেড়ে
যাচ্ছে। খাড়া
রাস্তায় হ্যান্ডব্রেক
না টেনে
২০ গজ
নিচে নেমে
যাওয়ার চেয়ে
হ্যান্ডব্রেক টেনে ৫ গজের মধ্যে
থেমে যাওয়া
ভালো নয়
কি?
কোন শেয়ারের
দাম কমে
যাওয়ার ক্ষেত্রে
যেমন আমরা
আরো বেশি
লসের ঝুঁকি
থেকে বিনিয়োগকে
সুরক্ষার জন্য
কিছু লস
মেনে নেই,
তেমনি কোন
শেয়ারের দাম
বাড়ার ক্ষেত্রেও
এই স্টপ
লস কৌশল
প্রয়োগ করে
লাভকে সুরক্ষা
করা যায়।
এটাকে অনেকেই
"ট্রেইলিং স্টপ " বলে থাকেন। অর্থাৎ
আপনার কেনা
কোন শেয়ারে
লাভ হলে
সেই লাভ
যেন আপনার
হাতছাড়া না
হয়ে যায়
সেজন্যই এই
কৌশল প্রয়োগ
করা হয়।
স্টপ লস
কৌশল কিভাবে
প্রয়োগ করবো?
যারা চার্ট
ভালো বুঝেন
না তাদের
জন্য পরামর্শ
হল, আপনার
কেনা দাম
থেকে ৫%
দাম কমে
গেলে সেল
করে দিন।
ম্যাচিউর ডে
তে যদি
৫% এর
বেশি লস
হয়ে যায়
তাহলে দ্রুত
বিক্রি করাই
হবে বুদ্ধিমানের
কাজ, আপনার
কেনা কোন
শেয়ারের দাম
ম্যাচিউর ডে
তে বা
তার পর
কেনা দেমার
কাছাকাছি আছে,
হঠাৎ দেখলেন
৪-৫%
দাম পড়ে
গেছে, তাহলে
কোন চিন্তা
না করে
ওই শেয়ার
খালি করে
ফেলতে হবে,
এক্ষেত্রে কোন ফিক্সড প্রাইস না
দিয়ে সরাসরি
মার্কেট প্রাইসে
সেল অর্ডার
দিয়ে দেবেন।
ট্রেইলিং স্টপ
এর ক্ষেত্রেও
আগের দিনের
ক্লোজ প্রাইস
থেকে ৫%
কমে গেলে
সেল দিয়ে
দেবেন। যেমন
ধরা যাক
আপনি গত
৩/৩/২০১১ তারিখে
৬০ টাকা
দিয়ে কাশেম
ড্রাইসেল কিনেছেন,
২০/৩/২০১১ তারিখে
এর দাম
উঠলো ১৩০
টাকা, এখন
যদি পরের
দিন এই
শেয়ারের দাম
৬.৫
টাকা কমে
যায় তাহলে
মার্কেট প্রাইসে
সেল করে
দিতে হবে,
আপনি যদি
১২০ টাকার
মধ্যেও বিক্রি
করতে পারেন
তাহলে আপনার
লাভ সুরক্ষিত
থাকলো, সর্বোচ্চ
দামে বিক্রি
করা বা
সর্বনিম দামে
কেনা সবসময়
সম্ভব নয়,
হয়তো ১০০
ট্রেড এর
মধ্যে ১/২ টা হতে পারে।
যারা চার্ট
দেখেন তাদের
জন্যঃ পুর্ববর্তী
সাপোর্ট লাইন
অথবা ৫%
এর মধ্যে
যেটি কম
সেটিকে স্টপ
লস পয়েন্ট
ধরে দাম
এর নিচে
চলে গেলেই
স্টপ লস
কৌশল প্রয়োগ
করবেন।
তাহলে কি
শুধু কিনবো
আর লস
দিয়েই যাবো?
না। শেয়ার
বাজার আপনার
আমার ধারণায়
চলে না।
আমরা জেনে
বুঝে বা
এনালাইসিস করে কোন শেয়ার কেনার
পরও তার
দাম কমে
যেতে পারে।
তাই যে
শেয়ারের দাম
কেনার পর
কমে যাচ্ছে
সেই শেয়ারে
অধিক লস
এড়ানোর জন্যই
স্টপ লস।
আবার যেই
শেয়ারে আপনার
লাভ আছে
সেই লাভ
ধরে রাখার
জন্যই ট্রেইলিং
স্টপ।
লসের কথা
শুনলে মাথা
ঠিক থাকে
না, তারচেয়ে
এমন কিছু
বলুন যাতে
স্টপ লস
প্রয়োগ করতে
না হয়?
এমন কিছু
আমার জানা
নেই। কেনার
সময় সাবধানী
হতে হবে।
দাম পড়ে
গেলে লস
কমানোর জন্য
স্টপ লস,
দাম বাড়ার
পর লাভ
না হারানোর
জন্য ট্রেইলিং
স্টপ।
কিভাবে কিনলে লসের ঝূঁকি কমবে?
ক্যান্ডেলস্টিক দেখুন। যখন
দেখবেন আগের
High থেকে পরের High উপরে (
Higher High) এবং আগের Low থেকে
পরের Low উপরে (Higher Low) হচ্ছে তখন কিনলে
দাম বাড়ার
সম্ভাবনা থাকে।
আমি শেয়ার
কেনার সময়
এই একটি
নিয়মই ভালো
করে দেখি।
আর যদি
দেখেন আগের
High থেকে পরের High নিচে (
Lower High) এবং আগের Low থেকে পরের Low নিচে
(Lower Low) হচ্ছে তখন যত
নামী দামি
আর হেভি
ওয়েট শেয়ারই
হোক না
কেন তা থেকে ১০০ হাত
দূরে থাকবেন।
আপনার কেনা
কোন শেয়ারে
যদি Lower High এবং Lower Low দেখেন
তাহলে সেল করে দিতে হবে।
সারসংক্ষেপঃ
১। কোন
শেয়ারের দাম
আপনার কেনা
দাম থেকে
বা আগের
দিনের ক্লোজ
প্রাইসের থেকে
৫% কমে
গেলে স্টপ
লস প্রয়োগ
করতে হবে।
পুর্ববর্তী সাপোর্ট লাইন অথবা ৫%
এর মধ্যে
যেটি কম
সেটিকে স্টপ
লস পয়েন্ট
ধরে দাম
এর নিচে
চলে গেলেই
স্টপ লস
কৌশল প্রয়োগ
করতে হবে।
২। কেনার
সময় Higher High এবং Higher Low ক্যান্ডেল
স্টিক দেখলে
কিনবেন, Lower High এবং Lower Low দেখলে কেনা যাবে না,
আগের কেনা
কোন শেয়ারে
Lower High এবং Lower Low দেখা গেলে
সেল করে
দিতে হবে।
আশা করি
খাড়া রাস্তায়
গাড়ি বন্ধ
হয়ে গেলে
এবার আর
হ্যান্ডব্রেক টানতে ভুল করবেন না!!!
(চলবে..................)
পরবর্তী পর্বঃ ভলিউম স্প্রেড।
Writer : Taj U Ahmed
এটা কি ফরেক্স'র মত ! bdtender.com একটি অনলাইন টেন্ডার/দরপত্র বিজ্ঞপ্তি পরিসেবা পোর্টাল।
ReplyDelete